স্যুট! পুরুষের প্রথম পছন্দ– বিজ্ঞাপনের মতো এই লাইন শুনে হয়তো হাসবেন কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। আত্মবিশ্বাসী পুরুষের প্রথম এবং একমাত্র পছন্দ স্যুট। স্যুট এমন পোশাক যে আপনি অফিস–মিটিং–অনুষ্ঠান এমনকি শপিং যেতেও পরতে পারেন। শীতে কাঁপছেন কিংবা গরমে ঘামছেন আর না হলে বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে যাচ্ছেন সব সময় বিভিন্ন ভাবে আপনি স্যুট পরতে পারেন। এখন কথা হচ্ছে
, এত ডাইভার্স অথচ সাধারণ একটি পোশাক কি আদৌ আলাদা করবে আপনাকে সবার থেকে
, এত ডাইভার্স অথচ সাধারণ একটি পোশাক কি আদৌ আলাদা করবে আপনাকে সবার থেকে? ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “ঠিকভাবে দর্জি দিয়ে বানানো স্যুট মেয়েদের জন্য আর সুন্দর নাইট গাউন পুরুষের জন্য”। অর্থাৎ সুন্দরভাবে বানানো স্যুট নারীদের পছন্দ আর নাইট গাউন ছেলেদের পছন্দ। বিভিন্ন গবেষণা এবং সমীক্ষায় বার বার উঠে এসেছে স্যুট সব নারীর প্রথম পছন্দ।
এখন এত সাধারণ কিন্তু অসাধারণ একটি পোশাকের ড্রেস কোড কি এতই সোজা? উত্তর না! সঠিকভাবে স্যুট পরার মানে প্রতিটি কোণায় কোণায় সঠিক মনোযোগ এবং সঠিক বিনিয়োগ। আমরা সবাই স্যুট অথবা স্যুটের জ্যাকেটের সাথে পরিচিত। তবে ক’জনই জানেন এর সঠিক ড্রেস কোড বা ঠিক ভাবে পরার নিয়ম। তাই আজ নিয়ে এলাম স্যুট পরার ২৭ টি পরীক্ষিত ড্রেস কোড।
১. জ্যাকেটের শেষ বাটনটি খুলে রাখুন
স্যুট এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ উপরের জ্যাকেট। সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অবশ্যই স্যুটের জ্যাকেটের বোতাম লাগিয়ে রাখুন, শেষেরটা বাদে! ওই শেষের বোতাম খোলা থাকলে আপনি যেমন চলাফেরা করে আরাম পাবেন তেমনি আত্মবিশ্বাসী বোধ করবেন।
২. বসা অবস্থায় জ্যাকেটের বোতাম খোলা রাখুন
অনেকেই এই ভুল করেন, স্মার্ট দেখাতে গিয়ে উল্টো নাজেহাল হয়ে যান। তাই বসার সময়ে কিংবা কিংবা বসার আগে স্যুটের বোতাম খুলে বসুন। এতে যেমন আপনি নিজে চাপাচাপি করে গুটিয়ে বসবেন না তেমনি স্যুটের ড্রেস কোড ঠিক থাকবে।
৩. শার্টের উপরের বোতাম লাগাতে ভুলবেন না
আপনি যদি অফিস–মিটিং কিংবা প্রফেশনাল কাজের জন্য স্যুট পরছেন তাহলে শার্টের উপরের বোতামের বিষয়ে যত্ন নিন। আর যদি ক্যাজুয়াল বা সাধারণ কিছুর জন্য শুধু জ্যাকেট পরছেন তবে শার্টের পরিপূরক হিসাবে টিশার্ট কিংবা পোলো শার্ট মিলিয়ে নিন।
৪. কালো স্যুটের সাথে সাদা পকেট স্কয়ার চাই চাই
অন্ধকার রঙ বিশেষ করে কালো পুরুষের ড্রয়ারের মূল রঙ। স্যুটে এর ব্যতিক্রম হবে না। স্যুটের জুয়েলারি হচ্ছে পকেট স্কয়ার। পকেট স্কয়ার হলো স্যুটের বুক পকেটে থাকা রুমালের বের হওয়া অংশ যা স্যুটকে দেয় বিশেষ ধাঁচ। তাই সব স্যুটের ড্রেস কোডের অন্যতম এই পকেট স্কয়ার। অন্ধকার ধরনের স্যুটের জন্য চাই হালকা রঙের পকেট স্কয়ার অথবা উল্টোটা। পকেট স্কয়ার কিন্তু স্ত্রি করা বাধ্যতামূলক।
৫. স্যুটের সাথে স্পোর্টস ধরনের ঘড়ি পড়বেন না
শত বছর ধরে ঘড়ি পুরুষের প্রধান জুয়েলারি। যে কোনোভাবে সব কিছুর সাথে ঘড়ি পরা যায়। তবে স্যুটের সাথে পরার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকা উচিত। স্যুটের সাথে পরার জন্য সাধারণ ধরনের বা স্পোর্টস ধরনের ঘড়ি পরার একদম নিষেধ। হয় চেইন বা ভালো মানের চামড়া দিয়ে তৈরি ঘড়ি পরুন অথবা স্যুটের সাথে ঘড়ি এড়িয়ে যান।
৬. কাঁধে কাঁধ মেলা চাই
স্যুটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে ফিটিং অর্থাৎ আপনার সাইজ ঠিক মতো হওয়া। তাই স্যুটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ড্রেস কোড হচ্ছে স্যুটের কাঁধ এবং আপনার কাঁধ ঠিক ভাবে মিলে যাওয়া। আর যদি না মেলে বুঝে নেবেন স্যুট আপনার সাইজের নয়। কেননা আপনি আপনার চেয়ে বড় ছোট সাইজের জ্যাকেট পড়ে শেষমেশ হাসির পাত্র হবেন। তাই এই বিষয়ে খুব মনোযোগী হন।
৭. ব্যাগী ট্রাউজারকে ‘না’ বলুন
ব্যাগী ট্রাউজার বলতে ঢিলাঢালা প্যান্টকে বোঝায়। স্যুটের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আপনাকে শার্প দেখানো আর আপনি যদি ঢিলঢিলা ট্রাউজার বা প্যান্ট পরেন বুঝতেই পারছেন কেমন দেখাবে নিজেকে!
৮. স্যুটের জ্যাকেটে মনোযোগ দিন
স্যুটের সবচেয়ে উপরের এবং বাইরের অংশ জ্যাকেট। তাই এর প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ দিন। জ্যাকেট কেনার বা বানানোর সময় মিলিয়ে দেখুন নিচের তিনটি বিষয়-
- জ্যাকেটের কাঁধ মিলছে তো আপনার কাঁধের সাথে।
- জ্যাকেটের মধ্যে দিয়ে সহজে আপনার হাত ঢোকানো যাচ্ছে।
- জ্যাকেট পরার পর বোতাম লাগছে তো ঠিকভাবে!
৯. কর্পোরেট লুক চাইতে ওভারকোট
ওভারকোট স্যুটের বেশ নতুন সংযোজন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বেশ কাজের এবং নিজের মাঝে সর্বোপরি কর্পোরেট লুক আনতে এর তুলনা নেই, নিজেই একবার পরখ করে দেখুন।
১০. স্যুটে অতিরিক্ত জুয়েলারি রাখবেন না
আপনি যদি নিজেকে সাধারণ অথচ সবার থেকে আলাদা রাখতে চান তবে অতিরিক্ত স্যুট জুয়েলারি এড়িয়ে চলুন। কারণ সাধারণ সব সময়ই অসাধারণ!
১১. আপনার জুতো আপনার স্যুটের কথা বলবে
ফ্যাশন জগতে বলা হয়ে থাকে জুতায় লেখায় থাকে মানুষ কেমন! জুতার রঙ এবং স্যুটের রঙ এর মাঝে হালকা মিশেল রাখার চেষ্টা করুন এতে জুতো আপনি এবং আপনার পছন্দ সম্পর্কে বলবে। তবে মিল রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত বেমিল চলবে না। আবার বলা হচ্ছে জুতার সাথে আপনার স্যুটের বিষয়ে মনোযোগী হোন।
১২. জুতার সাথে সাথে মোজা যেন পা ঢেকে রাখে
জুতার যেমন আপনার স্যুট কম্বিনেশনের মূল তেমনি মোজাও। মোজা পরার সময় খেয়াল রাখবেন পা যেন বেরিয়ে না থাকে। আরেকটি বিষয় সতর্ক থাকা উচিত যে, সাদা মোজা পরিহার করুন স্যুটের সাথে।
১৩. টাইয়ের লম্বায় সতর্ক থাকুন
স্যুটের আরেকটি অনুষঙ্গ হল টাই। আমরা সবাই টাই পরতে গিয়ে ভুল করি, বিশেষ করে টাইয়ের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ। টাইয়ের দৈর্ঘ্য ঠিক করা হয় টাইয়ের মাথা যেন বেল্ট ছুঁই ছুঁই করে। টাইয়ের মাথা যদি বেল্টের নিচে নামে বা অনেক উপরে থাকে তাহলে ভুল হয়েছে আপনার। চেষ্টার মাধ্যমে এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
১৪. স্যুটের অয়েস্টকোট ঠিকভাবে পরুন
অনেকে স্যুটের সাথে অয়েস্টকোট বা বুককোট পরেন। এই বিষয়ে সর্তক থাকা উচিত। অয়েস্টকোট যেন টাইয়ের মতো বেল্ট পর্জন্ত হয়, এর বেশি বা কম হলে আপনার স্যুট পরাটাই বৃথা হবে।
১৫. সাসপেন্ডার থাকলে বেল্ট নাই থাকুক
সাসপেন্ডার হচ্ছে বেল্টের পরিপূরক। অনেকে ফ্যাশন বদলাতে এটি ব্যবহার করেন তবে এর সাথে বেল্ট পরে ভুলটা করে ফেলেন। সাসপেন্ডার এর সাথে বেল্ট কখনই যাবে না। সাসপেন্ডার ব্যবহার করা হয় আপনার প্যান্ট বা ট্রাউজারকে ধরে রাখার জন্য অনেকটা বেল্টের মতো, তাই অহেতুক বেল্টের ব্যবহার আপনার ব্যক্তিত্বকে কমিয়ে আনবে।
১৬. শার্ট ঠিক আছে তো!
স্যুটের আরেকটি মূল উপাদান হচ্ছে শার্ট। শার্টের হাতা বা শার্টের কাফ যদি আপনার হাতের থেকে বড় হয় তার মানে আপনার শার্ট এর সাইজ ঠিক নেই, তাই শার্ট কেনার সময় আপনার সাইজ মতো দেখে নিন নয়তো আপনার স্যুট পরা মাঠে মারা যাবে।
১৭. টাইয়ের নটের সাইজ যেন বড়–ছোট না হয়
টাইয়ের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ যেমন স্যুটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি টাইয়ের নটের সাইজ। নটের সাইজ যদি বড় কিংবা কিংবা ছোট হয়ে তবে আপনি খুবই নাজেহাল বোধ করবেন, তাই নটের সাইজের বিষয়ে অবশ্যই মনোযোগী হোন।
১৮. স্যুটের রঙের সাথে টাইয়ের রঙের মিল থাকা চাই
স্যুট আর টাই একে অন্যের পরিপূরক। তাই এই দুটোর কম্বিনেশন থাকা বাধ্যতামূলক। স্যুটের রঙের সাথে মিল রেখে টাই পছন্দ করুন। গাঢ় রঙের স্যুটের সাথে হালকা রঙের টাই মিলবে আর হাল্কা রঙের স্যুটের সাথে যাবে গাঢ় রঙের টাই।
১৯. স্যুটে সেলাই কিংবা অহেতুক সুতো যেন না থাকে
আমরা অনেকেই এই বিষয়ে উদাসীন থাকি। আমাদের স্যুটে অহেতুক সুতা বেড়িয়ে থাকে ঝুলতে থাকে যা খুবই নিম্নমানের দেখায়। স্যুটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করা আর এরকম হয়ে থাকলে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সহজেই ধারণা করা যায়, তাই একটু সতর্ক থাকুন এই বিষয়ে।
২০. টাইবারের সাইজ ঠিক রাখুন
অনেকে নিজের সুবিধার জন্য টাইতে ব্যবহার করে টাইবার। এই টাইবারের কাজ হচ্ছে টাইকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা। তাই টাইবার ব্যবহারের সময় দেখবেন টাইবার যেন টাইয়ের চেয়ে বড় না হয়।
২১. স্যুটের কাপড় ঠিক আছে তো?
স্যুটের ব্যবহার সবভাবে করা গেলেও স্যুটের কাপড়ের বিষয়ে মনোযোগী হোন। নিয়মিত ব্যবহারের জন্য যেমন অফিস মিটিং কিংবা অনুষ্ঠান যেমন পার্টি বা দাওয়াত বা অকেশনাল ব্যবহারের কথা বিবেচনা করে স্যুটের কাপড় নির্ধারণ করুন। কেননা প্রতি মাসে নিশ্চয়ই আপনি দর্জি দিয়ে স্যুট বানাবেন না।
২২. শার্টের কলার এবং স্যুটের মাঝে দূরত্ব থাকলে চলবে না
অনেকের শার্টের সাথে স্যুটের দূরত্ব থাকে। এর কারণ মূলত সাইজ ঠিক মতো না হওয়া বা আপনার চেয়ে বড় সাইজের হয়েছে। স্যুট যদি ফিটিংই না হয় তবে পরাটা সত্যিই অহেতুক। তাই চেষ্টা করুন দর্জির কাছে গিয়ে বানিয়ে নিতে।
২৩. আপনার কর্পোরেট স্যুটে নিচের কোড গুলো আছে তো?
স্যুট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় অফিসিয়াল বা কর্পোরেট কাজের জন্য। কর্পোরেট মিটিং থেকে শুরু করে দৈনিক অফিসে জন্যে স্যুট চা-ই চাই। নিজের প্রথম কর্পোরেট স্যুট বানাতে নিচের বিষয়গুলো টুকে নিন
- ডাবল ব্রেস্ট্রেড হতে হবে। অর্থাৎ ডাবল ধরনের বোতাম থাকতে হবে নিচের চিত্রের মতো।
- জ্যাকেটের লেপেল অবশ্যই নোচ লেপেল পছন্দ করবেন কর্পোরেট লুকের জন্য। কি এই নোচ লেপেল? নিচেই দেখুন।
২৪. স্যুটের বোতাম কোড জানেন তো?
বিভিন্ন ধরনের স্যুট হয় এবং স্যুটের পার্থক্য নির্ভর করে বোতামের অবস্থান এবং সংখ্যার উপর। স্যুট যে ধরণ বা সাইজের হোক না কেন। স্যুটের উপর থেকে বোতাম লাগাবেন এবং নাভি পর্যন্ত বোতাম লাগানো হবে তবে ভুলেও নিচের বোতাম লাগানো যাবে না। স্যুটের বিষয়ে এই বিষয়টা সতর্কের সাথে মাথায় রাখবেন নয়তো স্যুট পরাটাই ভন্ডুল হবে।
২৫. বুকের ভেস্টের শেষ বোতাম খোলা আছে তো?
স্যুটের জ্যাকেটের যেমন শেষ বোতাম খোলা থাকে তেমনি আপনি যদি ভেস্ট পরে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভেস্টের শেষ বোতাম খুলে রাখতে হবে।
২৬. জ্যাকেটের সাইজ সম্পর্কে জানুন
স্যুট আর জ্যাকেট একই কথা, জ্যাকেটের সাইজের কম বেশি হলেই জ্যাকেট বরং অচল। কিভাবে বুঝবেন জ্যাকেট এর সাইজ ঠিক আছে। জ্যাকেটের দৈর্ঘ্য যদি আপনার ট্রাউজারের জিপার বা প্যান্টসের চেইনকে ঢেকে রাখে বুঝতে পারবেন জ্যাকেটের দৈর্ঘ্য ঠিক আছে। জ্যাকেট ঠিক রাখতে তাই দর্জি দিয়ে বানিয়ে নিন।
২৭. শার্টের নিচে কিছু পরতে ভুলবেন না
স্যুটের নিচে শার্ট আর শার্টের নিচে চাই গেঞ্জি। এই গেঞ্জি আপনাকে দুই ভাবে সাহায্য করবে। প্রথমত গেঞ্জি পরা থাকলে শার্ট ঠিকভাবে আপনার গায়ে লেগে থাকবে, ঝুলঝুল করবে না। দ্বিতীয়ত গরমে ঘেমে গেলে ঘামের জন্য শার্ট ভিজে যাবে না। এতে আপনি যেমন হাঁসফাঁস করবেন না তেমনি শার্টে ঘামের বাজে দাগ লেগে থাকবে না।
বলা হয়ে থাকে, নারীরা পুরুষের স্যুটকে তার সিক্সপ্যাক থেকে বেশি পছন্দ করে, করারই কথা! কথায় আছে না প্রথম দর্শনেই অনেকসময় ভাগ্য লেখা থাকে? তাই স্যুটের বিষয়ে সব পুরুষদের উচিত সচেতন হওয়া। স্যুটের ব্যবহারের ডাইভার্শন থাকলেও স্যুটের ড্রেস কোড খুবই সীমিত, আর এই কোড বাদে স্যুট না পরাই ভালো। তাই এরপর থেকে স্যুট পরার সময় অবশ্যই সবকিছু মিলিয়ে নেবেন।