“সফলতা”

লিখাঃ ঝংকার মাহবুব।

তুমি যেটা করতে চাও সেটা করতে পারাটাই সফলতা।

ধরো একজনের রিক্সাচালক যদি তার দুই বছরের বয়সী বাচ্চা আর অসুস্থ স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দিতে চায়। এবং তিনি যদি সেটা করতে পারেন তাহলেই তিনি সফল। আবার তুমি যদি আজকে সকালের ৮.০০ টার ক্লাস কোন রকমে ৮.০৫ গিয়ে এটেন্ডেন্স পেতে পারো। তাহলে তুমিও সফল। এইরকম খুচরা-খাচরা অনেক ছোটখাটো সফলতা প্রতিদিন-ই আমাদের লাইফে আসে। কিন্তু এই সফলতাগুলো শুধু তুমি-ই জানো। বাইরের মানুষ এগুলা জানে না। তাই এইগুলাকে আমি বলি- ইন্টারনাল সাকসেস।

. . তবে বেশিরভাগ মানুষ সফলতা বলতে যেটা বুঝায় সেটা হচ্ছে বাহ্যিক সফলতা বা এক্সটার্নাল সাকসেস। যেটার খবর অন্য মানুষরা জানে। সেটা নিয়ে অন্যরা বাহবা দেয়। তাই আমরাও সেটার পিছনে ছুটি। এই সব এক্সটার্নাল সাকসেস এর তিনটা পিলার আছে।

১. কনসিস্টেন্সি বা ধারাবাহিকতা এক্সটার্নাল সাকসেস পেতে হলে যে কাজটাতে তুমি ভালো সেটা দীর্ঘদিন ধরে ভালোভাবে চালিয়ে যেতে হবে। যেমন ধরো, সাকিব আল হাসান সফল। কারণ সে ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করার কাজটা ধারাবাহিকভাবে বহুদিন ধরে রাখতে পারছে। হুমায়ূন আহমেদ সফল। কারণ উনি দীর্ঘদিন ধরে বই লেখার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছেন। এই একই কারণে আফতাব নামক ক্রিকেটার সফল নন। কারণ সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। .

২. গ্রোথ বা এগুতে থাকা কেউ যদি একই লেভেলে পড়ে থাকে। তাহলে বাইরের মানুষ তাকে সফল মনে করবে না।বরং সফল হতে হলে সে আজকে যেই লেভেলে আছে তার চাইতে আগামীকাল আরেকটু বেশি আউটপুট দেখাতে হবে। বা আরেকটু বেশি রান করতে হবে। বা আরেকটু বেশি জনপ্রিয় হতে হবে।

. রিকগনিশন বা প্রচার লাগবে সফল হওয়ার আরেকটা দিক হচ্ছে– প্রচার পাওয়া। কেউ বিশাল কিছু করে ফেললো। লাইফ বিসর্জন দিলো। কিন্তু নিউজ পেলো না। ভাইরাল হলো না। তার খবর কেউ জানলো না। তাহলে সমাজের চোখে সে সফল হবে না। . . তবে এইসব এক্সটার্নাল সফলতা তোমাকে মানুষিক শান্তি দিতে পারবে কিনা সেই গ্যারান্টি নাই। কারণ সফল হলেই যে সুখী হবে তার কোন গ্যারান্টি নাই। বরং সুখী হওয়ার জন্য নিজের চিন্তাভাবনার এঙ্গেল ঠিক করতে হয়। কারণ সফলতা জিনিসটা তুলনামূলক।

এই যেমন ধরো, আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে পাইথন শেখার জন্য Programming Hero নামের একটা এন্ড্রয়েড এপ বানিয়ে ফেলছি। এক বছরে ২৫০,০০০ ডাউনলোড পেয়েছি। আমরা পিজ্জা খেয়ে সবাই সেলিব্রেট করেছি। ভাবছি এই বিষয়ে আমরা হেব্বি সফল। এই মুহূর্তে এপ স্টোরের আরো এক মিলিয়ন এর বেশি এপস আছে যাদের ডাউনলোড ১০০,০০০ পৌঁছেনি। তাদের তুলনায় আমরা অনেক বেশি সফল। অথচ এই তুলনাটাই যদি আমরা–ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, পাঠাও, জিপি এপ এর ডাউনলোড এর সংখ্যার সাথে তুলনা করতে যাই। তাহলে আমাদের খুঁজেই পাওয়া যাবে না। মন খারাপ করে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবো না।

সো, শেষ কথা হচ্ছে--তোমার সফলতার, তোমার সুখের মানদন্ড হচ্ছ তুমি। তুমি-ই ঠিক করবে কোনটাতে সফল আর কোনটাতে না। নতুন ছোট একটা কিছু করতে পারলে সেটাকে এনজয় করো। তোমার ছোট খাটো ইন্টারনাল সাকসেসগুলোকে মূল্যায়ন করো।এক্সটারনাল সাকসেস এর গুষ্টি মারো। ইন্টারনাল সাকসেসগুলোকে উপভোগ করার চেষ্টা করো। অন্যদের সাথে তুলনা করা কমিয়ে দাও। দেখবে– লাইফ অটো সফল হয়ে গেছে।

Leave a Reply/আপনার মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.